top of page
Writer's pictureপ্রদীপ্ত দে

ভেঙে মোর ঘরের চাবি - শেষ পর্ব

(পূর্ববর্তী পর্বটি পড়ুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে)


শেষ পর্ব


মঙ্গলে উষা, বুধে পা/যথা ইচ্ছা তথা যা - খনার বচন আজকের দিনে বিলুপ্তপ্রায়। তবুও দেখলাম, সব মিলিয়ে ঋজু আর আমি রবিবার কাজে নামতে গিয়েও নামতে পারলাম না। কারণ, অভীকদার ফোন। অভীকদা মাইতি বাড়ির তদন্তের ফাইলের কপি দিতে পারবে না ঠিকই। তবে, নিজে একবার সময় নিয়ে সোমবার দেখে আমাদের জানাবে বলল। সমস্ত তথ্যের জোগান পেতে, সেগুলোকে ক্রমান্বয়ে সাজাতে ঋজু আরো একটা দিন নিল। সোম-মঙ্গল দুদিন আমার একটা সাইটের কাজে অনেকটা সময় দিয়ে ফিরতে রাত হয়ে গেছিল। তেমন ওতপ্রোতভাবে ঋজুর সাথে থাকতে পারিনি দুদিন। মঙ্গলবার রাতে ঋজুর হোয়াটস‌অ্যাপে ম্যাসেজে ঢুকলো ওপরে উল্লিখিত খনার বচন। সাথে পাশে ছিল সময়-সকাল নটা। তার নীচে লেখা - ব্রেকফাস্ট বলরাম মল্লিকে। সকাল নটায় ঋজুর বাড়ি মানে আমাকে অন্তত সাড়ে-সাতটায় ঘুম থেকে উঠতে হবে। ঋজুকে যথারীতি বললাম সময় পিছোতে। পলাশবাবু কাজ সেরে গোডাউনে সাড়ে দশটায় ঢুকবেন। তাই এত সকালে সময় রাখা হয়েছে ক্লায়েন্টের ইচ্ছায়। উপায় নেই। সকাল সকাল উঠতেই হল। সাথে বলরাম মল্লিকের নামটাও অনুঘটকের কাজ করল।


বুধবার সকাল আটটার মধ্যে ঋজুর বাড়ি ঢুকে গেলাম। যদুবাবুর বাজারকে বাঁদিকে রেখে খালসা স্কুলের দিকে এগিয়ে যেতেই বাঁদিকে বলরাম ও রাধারমণ মল্লিকের বিরাট দোকান। যার মিষ্টি ও নোনতা আইটেম বলে শেষ করা যাবে না। ঋজু খাওয়ালো রাধাবল্লভী ও আলুরদম। সাথে একটা করে বেকড্ রসগোল্লা আর দরবেশ। আসা সার্থক।


খনার বচন অর্ধেক এখানেই ফলে গেল। খাওয়া শেষে দোকান থেকে বেরিয়ে ঋজুর বুলেটের পেছনে বসে মজা করে বললাম

- কীরে, গতদুদিন ধরে তো তেমন কেসের খোঁজখবর রাখিনি। কিছু সমাধান পেয়েছিস তো?


ঋজু আমাকে একটা লবঙ্গ দিয়ে আর একটা নিজের মুখে নিয়ে বুলেটে কিক দিয়ে বলল

- যে আঁধারে ছিলাম, প্রায় সেই আঁধারেই আছি বন্ধু। শুধু তাড়াহুড়ো করছি কারণ বনানী পালের ওপর পুলিশি নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে বলে।


- সে কিরে!!


- হুম, এখন কিছু হোম‌ওয়ার্কের ওপর ভরসা। বাকিটা স্টেজে মারবো।


কথা শেষ না হতে হতেই আমরা মাইতি বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো কল্পনা। ঋজু কল্পনাকে বলল বনানী পালের ঘরের চাবি সবাইকে বলে নিয়ে আসতে। পলাশবাবু আর অনামিকাদেবীকেও নীচে নেমে আসতে বললেন। ওদের দুজনের আগেই দোতলা থেকে নেমে এলেন মেজবৌ শর্বরী মাইতি। নামতে নামতেই বললেন

- কী ব্যাপার বলুন। বনানীর ঘরের চাবি তো খোলা যাবে না।


ঋজু মুখে একটা চুকচুক আওয়াজ করে মাথা নাড়িয়ে বলল

- আহা! কিছুক্ষণ খুলে রাখতে বললাম। তারপর তো বন্ধ করে দেব।


শর্বরী মাইতি ওপরে তাকিয়ে কল্পনাকে বকলেন

- কী রে?! কী শুনছিস? অল্পসময়ের জন্য কাজ আছে বলছে। আর তুই বলছিস একেবারের জন্য খুলতে বলছে।


এরপর নিজেই নেমে এসে বনানীর ঘরের দরজার তালা খুলে দিল। দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে বনানী। দরজার এপার থেকে আমি ডাকলাম

- এই যে,বনানী, দরজাটা খুলবেন একটু।


একটা চাপা গলায় "খুলছি" বলার পর মহিলা আরো দুটো মিনিট সময় নিলেন। তারপর ওপাশের খিল আর ছিটকিনি খুললেন। ঋজু আর আমি জুতোটা খুলে ভেতরে ঢুকলাম।


ঋজু জিজ্ঞেস করল

- আপনি কী কিছু বলবেন স্বীকারোক্তি হিসেবে, না আমিই বলব?


- আপনিই বলুন। আমার কিছু বলার নেই।


- হুম, স্বাভাবিক।


সিঁড়ি দিয়ে ততক্ষণে শর্বরী মাইতির পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে অনামিকা ও পলাশ পালুই।


এরপর ঋজু অনামিকাদেবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন

- দেখুন অনামিকাদি, আপনারা ঘটনার দিন যখন বেরোন তখন যে বনানীর ঘরে তালা দেখেছেন সেটা ঠিকই দেখেছেন। কিন্তু আপনাদের চলে যাওয়ার পরেই বড়বৌদি খেয়াল করে যে বনানীর পায়েস রাখা আছে দোতলার ফ্রিজে আর কেকটাও দেওয়া হয়নি। বনানীর ঘরের তালা খোলা হয়। বনানীকে নিয়ে তিনতলায় ওঠে আপনার বড়বৌদি। কেক দিয়ে তারপর দোতলায় নামে পায়েস নিতে। ঠিক সেই সময়ই ভিডিও কলে কথা হচ্ছিল আপনার মেজদার সাথে ওনার মেয়ে ঝুমির। বনানীকে খাবার ঘরে ঢুকিয়ে বড়বৌদি পরের ঘরে এগিয়ে গিয়ে যোগ দিয়েছিল। বোবোর সাথেও কথা হয় তখন। বনানীকে অনেকটা সময় পায়। বনানীর মানসিক অবস্থা তখন খুব খারাপ। পায়েস কেন, কোনো খাবার খাওয়ার‌ই তার ইচ্ছে নেই। বড়বৌদির দেওয়া সমস্ত রান্নাই তার ঘরে পড়ে আছে। দাত দিয়ে মনেহয় কেটেও দেখেনি। কেন, সে কথায় পরে আসছি। বনানী তখন তার বিষমেশানো পায়েস চামচ দিয়ে তুলে দিলো প্রতিটা আইসক্রিম কাপে অল্প অল্প করে, না জেনেই, মৃত্যুর পরোয়ানা হিসেবে। হয়তো ভাবলো, নষ্ট না করে খাবারটা দিয়ে দেওয়াই ভালো। তারপর নীচে নেমে গেল অবশিষ্ট পায়েসের বাটি নিয়ে। বড়বৌদি আর নীচে নামেননি। তালা খোলাই থাকে। এরপর সমস্ত খাবার কোথাও রেখে অথবা ফেলে দিয়ে বনানী খাবারের থালা, বাটি মেজে রাখতে প্রায় সাড়ে দশটার পরে তিনতলায় ওঠে আবার। সেখানে সেই দৃশ্য দেখে চমকে ওঠে এবং আমার বিশ্বাস সে ভয় পেয়ে নীচে নেমে যায়। এরপর সে সতর্ক হয়ে ওপরে ওঠে। সমস্ত থালাবাসন আবার করে মাজে যাতে হাতের ছাপ না থাকে। গ্লাভস না থাকায় হাতে ও পায়ে মোজা পড়ে নিয়ে আবার ওপরে ওঠে। যে রান্নাঘরে অলোকবাবু মৃত হয়ে পড়ে আছেন সেখানে রান্নাঘরে বাসন রাখেন। বাড়ির চাবির গোছা থেকে নিজের ঘরের চাবি বের করে নেয়। এরপর নীচের তালা আর চাবি দুটো জিনিস‌ই সে লুকিয়ে ফেলে। সেই তালা আর চাবি কালো প্যাকেটে মুড়ে ফেলে দেয় ছাদের ওপরে থাকা জলের ট্যাঙ্কের ভেতরে। এরপর সে নীচে এসে নিজেকে বাঁচানোর একটাই উপায় বের করে। নিজের দরজার একই কোম্পানির অন্য একটা তালার চাবি সে ওই চাবির গোছাতে ঢুকিয়ে দেয় যাতে কারো কোনো সন্দেহ না থাকে। এবং এক‌ই তালার নিজের কাছে থাকা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে সে নিজের ঘরে ঢুকে ভেতর থেকে বাইরে তালা লাগায়। বনানী জানতো ওর একটা অ্যাডভান্টেজ আছে। ওর কবজি ততটা চ‌ওড়া নয়। বাইরে দুটো পাল্লার কড়া অনেক বড় হ‌ওয়ায় হাত গলিয়ে একটু কষ্ট করলে ঘরের ভেতর থেকেই তালা লাগিয়ে দরজা টেনে দেওয়া যায়।আমরা চেষ্টা করলে কিন্তু পারবো না। এর ফলে একটা ধারণা তৈরি হয় যে সে আগাগোড়াই এসবের বাইরে এবং তার ঘর রাত দশটার থেকে তালাবন্ধ ছিল। এই একমাত্র তথ্যের জোরেই সে সমস্ত দোষারোপ থেকে বেঁচে যাবে।


শর্বরী মাইতি বলল

- আমি তো আগেই বলেছিলাম। দুধ দিয়ে কালনাগিনী পোষা হচ্ছে। কে কার কথা শোনে!


বনানী পালের অভিব্যক্তি বোঝার উপায় নেই। পলাশবাবু বললেন

- তাহলে তো মিটেই গেল। আমি আর ওপরে উঠছি না।


ঋজু বলল

- আপনি যেতে পারেন তবে শেষ হয়নি এখনো। বরং শুরু হয়েছে বলতে পারেন। বনানী পাল দোষী ঠিকই তবে কতখানি সেটা কিন্তু বলা সহজ নয়। এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।


অনামিকাদেবী ভুরু কুঁচকে বললেন

- যেমন?


- প্রথম প্রশ্ন, পায়েসে সোডিয়াম সায়ানাইডের সাথে অল্প ইয়াবা ড্রাগসের গুড়ো পাওয়া গেছে। যাতে অপরাধী হিসেবে পুলিশ অজয় মাইতিকেই চিহ্নিত করে। অজয় মাইতি নিয়মিত ইয়াবা মাদক নিতো। কিন্তু,অজয় মাইতি আমার অনুমান একাজ করেনি। কারণ,পুলিশের তদন্ত এবং ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী তখন তার কাছে ইয়াবা ছিল না যখন পায়েসের ধারেকাছে সে ছিল। আবার যখন ইয়াবা পায় তখন তার মাথায় অন্য চিন্তা চলে আসে। তার রক্তে মাদকের পরিমাণ তার প্রমাণ। দ্বিতীয় প্রশ্ন, শর্বরীদেবীর বক্তব্য সে বাড়ির চাবি নিয়ে যায়নি। তাহলে নিল কে? যদি শর্বরীদি বাদে কেউ তার চাবি সরিয়ে থাকে সে পুলিশকে গুলিয়ে দেওয়ার জন্য করে থাকবে এবং সে সেই সন্ধ্যেবেলা এই বাড়িতেই উপস্থিত থাকবে। তৃতীয় এবং সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, শুধু বনানীর পায়েসের বাটিতেই বিষ ছিল। কিন্তু বিষ মেশালো কে?


শর্বরী দেবী বললেন

- এই তো বললেন বনানী!!


ঋজু দুদিকে নেতিবাচক ঘাড় নাড়লো

- উহুম। চলুন ওপরে একটু। সবাই প্লিজ পাঁচটা মিনিট সময় দিন।


আমরা দোতলায় উঠে বসলাম একদম বাঁদিকের ঘরটায়। যার পরেই বাথরুম। এই ঘরটাতে আগের দিন আসা হয়নি। এই ঘরে কোনো মৃতদেহ পাওয়া যায়নি বলে আসবাবপত্র অবিকৃত‌ই আছে। চারপাশে পড়ার ও গল্পের ব‌ইয়ের তাক। একপাশে একটা পুরোনো গ্রামাফোন রেকর্ড প্লেয়ার। শোকেসে বেশ কয়েকটা ডিস্ক‌ও চোখে পড়লো। যাদের প্রথমে রাখা আছে বিসমিল্লাহ খানের সানাইয়ের ডিস্ক। ঘরটি বেশ বড় হ‌ওয়ায় চারপাশে অনেক বসার জায়গা। আমি আর ঋজু ডানদিকের দেওয়াল ঘেঁষে রাখা সোফাটায় বসলাম। অনামিকাদেবী আর পলাশবাবু আমাদের পাশেই বসেছেন চেয়ারের। আমাদের ঠিক বিপরীতে এসে বসেছেন মেজবৌ শর্বরী মাইতি। পানের বাক্সের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে রেখে পান সেজে যাচ্ছেন। আমরা ঢুকতেই এসে বসে বললেন

- তাড়াতাড়ি করবেন। কারখানায় যেতে হবে। সামনে পয়লা বৈশাখ। সমস্ত পরিষ্কার করার ব্যাপার আছে।


ঋজু বলল

- একটু সময় নিয়ে বসুন। কিন্তু প্রথমেই বলে দিচ্ছি আমি যা যা বলব তার নিরিখে কোনো পদক্ষেপ নিতে যাবেন না কেউ। কারণ, সবকিছুই প্রমানসাপেক্ষ। সবকিছুই বিচারাধীন। আমরা কতগুলো সূত্রকে জুড়েছি মাত্র। শেষ বিচারের দায় আইন-আদালতের।


এবারে বলি,ঘটনার দিন অর্থাৎ ২২শে মার্চ জন্মদিন উদযাপনের রাতে প্রতিটা মানুষ বিষমেশানো পায়েস খেয়েছিল যার জন্যে তার নাম বনানী পাল। কোনো পায়েসের কাপের মধ্যে তার আঙুলের ছাপ মেলেনি, কারণ সেগুলো বনানী ধরেইনি। বনানী পাল মাইতি পরিবারের আশ্রয়ে গত দেড়বছর যাবত থাকলেও সম্মানজনক আশ্রয় তিনি পরিবারের বেশিরভাগ মানুষের থেকেই পাননি। ব্যাতিক্রম শুধু মোহনাদেবী এবং অজয় মাইতি। প্রথমজন সত্যিই তাকে মেয়ের মত স্নেহ করতেন। আর দ্বিতীয়জন তাকে ভালবেসে ফেলে। কিন্তু, ভালবাসা বড়ই অদ্ভুত বস্তু। সুলভে মিললে,সে ভালোবাসা সস্তা চিরকাল। আর যার থেকে পাওয়া দুর্লভ তার থেকে পেতেই মন আনচান। বনানীর‌ও মন চেয়েছিল সুদর্শন,বিত্তশালী এবং সুপুরুষ পলাশবাবুর ভালোবাসা পেতে।


কথাটা শোনামাত্র‌ই আমি মুখটা অল্প ঝুঁকে পলাশবাবুর মুখের অভিব্যক্তি দেখার চেষ্টা করলাম। পলাশবাবু হাত তুলে অনামিকাদেবীকে একটা বিস্ময়সূচক মৌন ইশারায় বলার চেষ্টা করলেন "এটা কী হচ্ছে!!"


ঋজু বলে চলল

- পলাশবাবু আগে শ্বশুরবাড়ি আসতেন। বনানী দরজা খুলে দিতেন। পলাশবাবু বনানীর ঘরে সময় কাটিয়ে তারপর ওপরে উঠতেন। কখনো চলে যাবার সময়ও এক কাজ করতেন। সে খবর জানতেন শর্বরীদেবী তাই ননদের সংসার বাঁচাতে বনানীর ঘরে তালা লাগানোর বন্দোবস্ত করেন। কিন্তু বলতে পারেন না কেন। তাই তো শর্বরীদেবী?


পানভরা মুখে শর্বরীদি বললেন

- ওই যো বললাম, আকাশে থুতু ছেটালে নিজের মুখেই পড়বে। কাকে বলব!


- এরপর বনানীর পিরিয়ড বন্ধ হ‌ওয়ায় তার মনে ভয় ঢোকে। প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার জন্য টেস্ট কিট নিয়ে আসে পলাশবাবু দোলের দিন। এবং আশা করি দোলের দিন‌ও বনানীর তালা খোলা হয়েছিল। না খোলা হলেও, সিড়ির নীচ থেকে বনানীর ঘরের দরজা ফাঁক করলেই ওটুকু জিনিস দিয়ে দেওয়া যায়। পরের দিন বনানীর টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ আসে। জন্মদিনের দিন পলাশবাবুকে দরজা খুলে দিতেই বনানী পলাশবাবুকে সেই কথা বলে। গোপনে কথা হয় দুজনের। এবং সম্ভবত দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হয়। পলাশবাবু এই অবৈধ প্রেগন্যান্সির দায় অস্বীকার করেন।বনানীও হয়ত চেষ্টা করেন ভয় দেখাতে বা ব্ল্যাকমেইল করতে। তাদের এই গোপন কথা শুনে নেয় আরো একজন। অজয় মাইতি। সে ফুটবল খেলার হাফটাইমে নীচে নেমে এসেছিল। অজয় মাইতি ড্রাগ অ্যাডিকটেড ছিল। শর্বরী দেবীর কথা শুনেই মনে হয়েছিল যে অজয় মাইতি কোনো আপার ড্রাগে আসক্ত। রাতের পর রাত জেগে থাকা, সারাক্ষণ ব্লু ফিল্ম দেখা তার‌ই লক্ষণ। ইয়াবা নামের এই ড্রাগ ইদানিং হেরোইনের থেকেও বেশি ছেয়ে গেছে বাজারে। এই ইয়াবা অজয়কে অনেক সময় সাপ্লাই দিতো পলাশ পালুই। কখনো টাকার বিনিময়ে, কখনো এমনি। তবে সবার অলক্ষ্যে। সেদিনও তাই অজয় মাইতি ইয়াবার টানে জামাইবাবুকে দরজা খোলার জন্য নীচে নামতে গিয়ে শুনে ফেলে দুজনের গোপন কথাবার্তা। হঠাৎ মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। একদিকে তার দিদি-জামাইবাবু,অন্যদিকে তার হবু স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা বনানী। সে সঙ্কল্প করে তার জীবন শেষ করবার। অজয় মাইতির এক বন্ধু দুমাস আগেই আত্মহত্যা করতে গিয়ে বিফল হয়। এখন সে পাভলভে ভর্তি। রাজেশের কথা মনে আছে পলাশবাবু? পদ্মপুকুরে তার সামনে অজয়কে ইয়াবা দিয়েছিলেন, খেয়াল আছে নিশ্চয়ই?


পলাশবাবু খুব গম্ভীর ভাব নিয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলল

- ওসব পাগল-ছাগল কে কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না। আপনি শেষ করুন, আমার কাজ আছে।


ঋজুর মুখে স্মিত হাসি

- একদম শেষের দিকেই চলে এসেছি। তো সেই রাজেশ দুমাস আগেই নিজের বাঁহাতের শিরা কেটে ধরা পড়ে যায় এবং বেঁচে যায়। অজয় মাইতি এতটাই ভেঙে পড়ে যে নেশার ট্যাবলেট পেয়েও সে নেশা করে না। দরজা বন্ধ করে নিজেকে শেষ করে। কেউ বাঁচানোর ছিল না। কারণ সবাই জানতো ও ঠিক আছে, রাত হলে খাবার খেতে যাবে ওপরে। তখন ঘড়িতে নটাও বাজেনি। নটার পরে মেজদা ওপরে ওঠে খেতে। খেলার শেষ হতে আর কিছুক্ষণ বাকি। ছেলেরা মগ্ন খেলায়। তিনতলার ঘরে বড়বৌ আর অনামিকাদেবী। আমার বিশ্বাস এই সময়েই পায়েসে কেউ বিষ মেশায় এবং শর্বরীদি যদি চাবির কথা সত্যি বলে থাকেন তাহলে সেই চাবিটাও তখন সরানো হয়। এখন বনানী, পলাশবাবু আর অনামিকাদেবী সেই দিনের বাড়িতে উপস্থিতের মধ্যে জীবিত। বাকিরা সবাই মৃত। আপনাদের কাছেই প্রশ্নটা রাখলাম, কে হতে পারে?


পলাশবাবু উত্তেজিত হয়ে বললেন

- আমরা কী করে জানবো? খুঁজে বের করা আপনার দায়িত্ব। আশ্চর্য!! আমি চললাম। ফালতু সময় আর টাকা নষ্ট!! আমি তো প্রথম থেকেই বলছি অজয়‌ আর বনানী মিলেই সমস্তটা ঘটিয়েছে।


ঋজু পকেট থেকে একটা খাম বের করে বোমা ফাটালো। যার ভেতর থেকে উঁকি মারছে গোলাপি দুহাজারি নোটের তোড়া। ঋজু টাকাটা বাড়িয়ে বলল

- পলাশবাবু,আপনি যতই লোক দিয়ে টাকা পাঠান। তদন্ত বন্ধ করার টাকা আমরা নিইনা। তদন্ত করার টাকা নিই। ইচ্ছে না থাকলে দেবেন না।


পলাশবাবু মেজাজ হারালেন

- হোয়াট রাবিশ!! আমি কাউকে টাকা পাঠাইনি।


অনামিকাদেবী খামটা হাতে নিয়ে ভেতর থেকে একটা চিরকুট বের করলেন। উঁকি দিয়ে দেখলাম লেখা " ক্লোজ ইনভেস্টিগেশন অফ মাইতি'জ "।


পলাশবাবু চেয়ার থেকে উঠে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন। অনামিকাদেবীর মুখ নীচু। অপমানে লাল হয়ে গেছে।

মৌনতা ভেঙে শর্বরীদেবী বললেন

- তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো। সব‌ই তো ভাসা ভাসা হল না ব্যাপারটা?!!


আমি বললাম

- পলাশবাবু চেয়েছিলেন আপনাদের সবার চক্ষুশূল বনানী পালকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলতে। আর সেই হত্যার দায় চাপিয়ে দিতেন আপনার ছোটভাইয়ের ওপর। কিন্তু, হিসেব মিললো না। সে নিজেই আত্মহত্যা করে বসলো। আর সেই বিষ অজ্ঞাতসারে ছড়িয়ে পড়ে মাইতি পরিবারে। এর থেকে বেশি আর কী বলব? ডোবানোর ক্ষমতা যে আমাদের নেই! তবে, পুলিশের কাছে আপনি অবশ্যই সমস্ত তথ্যপ্রমাণ রাখবেন। তারপর দেখা যাক। চলুন ছাদে গিয়ে আপনার তালাচাবি উদ্ধার করতে পারি নাকি।


অনামিকাদেবী টাকার খামটা আমার হাতে দিয়ে বললেন

- আমি চলি ভাই। এই টাকাটা আর ফেরত নেবো না বুঝলেন। এটা আমি দিলাম। ভেবে নিও ফিস হিসেবে। আমি আর থাকতে পারছি না বুঝলেন। আমাকে যে এতটা অপমান সহ্য করতে হবে আমি জানতাম না। ছিঃছিঃ!!


চোখের জল ফেলতে ফেলতে তিনি বেরিয়ে গেলেন।


এতক্ষণ চুপ করে থাকা বনানী বলল

- চাবিটা আমিই ট্যাঙ্কের মধ্যে ফেলেছিলাম কালো প্লাস্টিকে মুড়ে। ট্যাঙ্কের ঢাকনা ভেঙে গেছে তাই ইঁট চাপা দেওয়া ছিল। ওই রাতে আর লুকিয়ে রাখার জায়গা মাথায় আসেনি। কিন্তু, পায়েসে বিষ আমি মেশাইনি। আমি জানতাম‌ও না বিষ আছে। নাহলে আমি আমার ভাগের পায়েস সবাইকে দিতাম না।


ঋজু জিজ্ঞেস করল

- আর পলাশবাবু সম্পর্কে কী বলবেন?


- ও আমাকে নিয়ে আলাদা থাকবে বলেছিল খুব তাড়াতাড়ি। এদিকে ছোড়দা আমাকে বিয়ে করার জন্য ঝুলোঝুলি শুরু করে দিয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই,এই বাড়ির ছোট ব‌উ হ‌ওয়ার লোভ সামলাতে পারিনি। ওকে বাজিয়ে দেখার জন্য মিথ্যে করে প্রেগন্যান্সি আসার নাটক করি। দেখলাম আমার সন্দেহ ঠিক। ও আমাকে চূড়ান্তভাবে অপমান করল। বাচ্চার দায়‌ও অস্বীকার করল। অথচ কনপট্রাসেপটিভ পিল না খেলে কিন্তু আমি সত্যিই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়তাম। এখন ভাবছি সেদিন পায়েসটা খেয়ে নিলে আমিও বাঁচতাম আর সবাইও বাঁচতো।


বনানীর কথা শুনে ঋজুও আশ্চর্য হয়ে গেল

- একেই বলে বাস্তবের প্যাচ। আমরা কল্পনা করলেও পুরোটা বোঝা মুশকিল। তাহলে তো মিটেই গেল। শর্বরীদি আপনি ওপরের ট্যাঙ্কে লোক নামিয়ে তালাচাবি পেয়ে যাবেন এবং অতি অবশ্যই পুলিশকে জানাবেন।


আমরা বেরিয়ে এলাম মাইতিবাড়ি থেকে। টাকার খামটা ঋজুকে বাড়াতে ঋজু একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল

- এটা তুই রাখ। মনমেজাজ বিষিয়ে গেছে রে।


- কী হল রে?


- বুঝতে পারছিস না? বনানী মেয়েটা গরীব বলে কেসটা ওর বিপরীতে চলে যাবে। দামি উকিল রাখতে পারবে না। অথচ ওর যে খুব দোষ আছে তা কিন্তু নয়।


- আচ্ছা একটা কথা বল্, বনানীর বাটিতেই যে বিষ মেশানো হয়েছিল সেটা বুঝলি কী করে?


- অভীকদা জানালো ফরেনসিক রিপোর্টে পেয়েছে সমস্ত কাপের উপরিভাগের পায়েসেই বিষ ছিল। সেটা হতে পারে একমাত্র তখন যখন কেউ ভর্তি কাপগুলোতে আবার উপরি পায়েস দিতে যায়। বনানী বিষ মেশালে সে তার সাথে পুলিশকে ধন্দে ফেলার জন্য ইয়াবার গুড়ো মেশাতো না। কারণ, ইয়াবা বনানীর কাছে রাখার মত সামর্থ্য তার নেই।


- একটা ট্যাবলেট কত দাম রে?


- প্রায় আটশো থেকে হাজার।


- বাপ রে! আর নেয় কীভাবে?


- হেরোইনের মত‌ই। ফয়েলের নীচে আগুন ধরিয়ে টান। ব্যাস, সপ্তম আকাশে বিচরন করবি। হেরোইন যেমন ডাউন ড্রাগ। মানুষ ঝিমিয়ে পড়ে। এটাতে কিন্তু উল্টো। তাই আপার ড্রাগ।


- আর পলাশবাবুর ড্রাগের যোগানের কেসটা জানলি কী করে?


- গাঁজা পার্কের পেছনে একটা ড্রাগ ডিলার আছে। ঘুড়ি ধনেশ। সামনে ঘুড়ির দোকান। কোড বলতে হবে, ট্যাবলেট মাঞ্জা। ওই বলল রাজেশের কথা। রবিবার যোগাযোগ করে পাভলভে গেলাম রাজেশের ভাইয়ের সাথে। রাজেশের কথা শুনেই বুঝলাম আসল কালপ্রিট পলাশ পালুই।


- আচ্ছা, বনানী যে কোনো খাবার‌ই খায়নি, এটা একটু বাড়তি হয়ে গেল না?


- ভাই, এটা তদন্ত। এখানে হাওয়ায় তীর চালালে হয় না। প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় বাঁশি বাজিয়ে কর্পোরেশনের গাড়িতে ময়লা তোলে বাজু ধানুক। শনিবার ভোরেই ওকে ধরে সব জিজ্ঞেস করেছি। বাড়ির ময়লা যখন নেয় তখন খেয়াল করেছিস? ওদের কিন্তু সমস্ত খেয়াল রাখতে হয় প্লাস্টিকের মধ্যে কী কী আছে। বাজু নিজেই আমাকে বলেছে,যখন বনানীর ময়লার প্লাস্টিকের মধ্যে পোলাও, মাংস,কেক,পায়েস দেখেছে তখনই অদ্ভুত লেগেছিল। পরে সেদিনই শোনে ওই ঘটনা। কিন্তু পুলিশি ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে কাউকে জানায়নি।


- আর ট্যাঙ্কের ভেতরে তালাচাবি ফেলার কেসটা? সিঁড়িতে আবিরের দাগ দেখে সন্দেহ হল?


ঋজু একটা লম্বা ধোঁয়া ছেড়ে বলল সিগারেট নাড়তে নাড়তে বলল

- হুম, শুধু নামার দাগ ছিল তো। এই তো ধরে নিলি। বলছি না স্যান্ডি তুইও কিন্তু সমান বুদ্ধিমান,শুধু মানতে চাস না। সেদিনই ছাদে গিয়ে ঢাকা খুলে দেখেছি। কিন্তু আলো পড়ে যাওয়ায় মোবাইলের আলোতে ঠিক স্পষ্ট হলো না। স্পষ্ট হলো অন্য একটা সুতোয়।


- সুতোয়?


- এও বাজু ধানুকের তথ্য। সেদিন মাংস-পোলাওয়ের সাথে দু-জোড়া আঙুলকাটা মোজাও ফেলা যায় আবর্জনার গাড়িতে। আমিও ভাবলাম,চৈত্রের গরমে আঙুল কাটা মোজা?!! তাও দু-জোড়া?!! পরে দেখলাম, ট্যাঙ্কের ঢাকনার একদিকে স্ক্রুয়ের সূচালো ডগায় ঘিয়ে রঙের নাইলনের সুতো পাক খেয়ে ছিল। বনানী অন্ধকারে যা দেখতে পায়নি। এছাড়াও আরেকটা কথা আমি কাউকে বলিনি যা এখন তোকে বলছি। বনানী মনেহয় অজয় মাইতিকেও আত্মহত্যার পরবর্তী সময়ে দেখেছিল। কারণ অজয় মাইতির খড়খড়ির ধুলোর আস্তরণে আমি আঙুল দেওয়া মোজার ছাপ দেখতে পাই। সে কথা এখন বললে বেচারা আত্মহত্যার সহায়তা করার কেস খেয়ে যাবে।


- আর তালাটা যে বনানীর সদর দরজার সেটা কোত্থেকে জানলি?


- অনুমান বিজ্ঞান। বনানীর সদর দরজার দিকটা দেখেছিস? দক্ষিণ-পশ্চিম দিক। একবছরের বর্ষার জলের ঝাপটা খেয়েছে। ভালো করে তালার ভেতরটা দেখলেই বুঝতে পারবি মরচে পড়ে গেছে। যা অন্দরমহলের দরজার তালা হলে পড়ার‌ই কথা নয়। আর কিছু?


- আর মেজবৌ শর্বরী মাইতির চাবির গোছা,সেটা কোথায় গেল?


- সেটার দুটো সম্ভাবনা হতে পারে। নয় শর্বরী মাইতির কাছেই ছিল। ভয়ে বলছে না। অথবা পলাশ পালুই চাবির গোছা উধাও করেছে পুলিশকে বিপথগামী করার জন্য।


আমার গোটা কেসটাকে একজায়গায় মেলাতেই সমস্যা হচ্ছিল। বললাম

- কেসটা কেমন হল না? যে গোয়েন্দা নিয়োগ করতে এল, দেখা গেল সেই অপরাধী।


- মোটেই সেরকম নয়। নিজের বাবা-ভাইয়ের এরকম অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্য জানতে উদগ্রীব ছিল অনামিকা পালুই। ওর অনেক বড় ডিটেকটিভ এজেন্সির কাছে যাওয়ার প্ল্যান ছিল। পলাশ পালুইয়ের মনে তো অপরাধী লুকিয়ে আছে। সে হয়তো অনেক বুঝিয়েছে। বেশী বোঝালেও তো সে সন্দেহের লিস্টে ঢুকে যাবে। সংসারটা টিকিয়েও রাখতে হবে। তাই ভেবেছে হয়তো লোকাল কাউকে দিয়ে তদন্ত করালে সবটাই জানতে পারবে আর কন্ট্রোল করতে পারবে। পয়সা থাকলে লোকের মনে হয় সবকিছুই তার পকেটে। মনে নেই? প্রথম দিন ফিসের কথা ওই তো জিজ্ঞেস করেছিল। তুই বলেছিলি পঞ্চাশ হাজার দিতে। পরে যখন দেখলাম খামের মধ্যে এক‌ই টাকার অঙ্ক,তখন বুঝতেই পেরেছি। তবে এদের ধরা পড়লেও কিছু যায়-আসে না। এরা এতটাই বেপরোয়া। ও হয়তো আইনের পরামর্শ নিয়েও নিয়েছে। দেখেছে ও আইনের ফাঁকে পালিয়ে যাবে।


- তাহলে কী করা যায়?


- কীসের কী করা যায়?


- না বলছিলাম, বনানী পাল মেয়েটাকে যদি হেল্প করি।? পকেটের টাকাটা একটা নিরপরাধ মেয়েকে বাঁচানোর কাজেই লাগুক না।


- ওহ্ হরি!! তাই বলি,এত কেন উতলা বনানীর জন্য! গোবেচারা ভেবে এগোলে এগোও কিন্তু অতটাও গোবেচারা ও নয়। এছাড়াও অনেক পুরুষ সঙ্গের দোষ‌ও কিন্তু ওর আছে।


- ধুর!! তোদের খালি এক কথা!! আমি ভাবছি প্রলয়দাকে বলে কেসটা টেকওভার করতে। অল্প টাকার মধ্যে যদি বনানীকে বাঁচানো যায়।


- উত্তম প্রস্তাব। আমিও রাজি। বলে দেখিস যদি কেসটা নেয়।


আমরা ঋজুর বাড়ির কাছাকাছি যখন তখন সূর্য মধ্যগগনে। আমি গাড়িতে ঢুকে স্টার্ট দেব এমন সময় ঋজুকে ডেকে বললাম

- এই কেসটা তো লিখবোই। আর কদিন পরেই বৈশাখমাস। আর বৈশাখ মানেই পঁচিশে বৈশাখের কথা মাথায় আসে। বলছি কী, এই কেসটার একটা নাম মাথায় এসেছে, বলব?


ঋজু ওর দুটো কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে গাড়ির জানলায় দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলল

- কী? ভেঙে মোর ঘরের চাবি?


আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম

- তোর টেলিপ্যাথির জোর আছে ভাই। চললাম।


গাড়ির সাইডস্ক্রিনে দেখলাম ঋজু হেসে হাত নাড়ছে। আমিও হাত নেড়ে এগিয়ে গেলাম।



সমাপ্ত


গল্পে বর্ণিত ঘটনা সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক এবং বাস্তবের সাথে কোনও মিল নেই

পূর্ববর্তী পর্বটি পড়ুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে

(বুকমেকার্স ও বন্ধুরা - শারদীয়া ১৪২৭ -এ প্রথম প্রকাশিত। অলঙ্করণঃ আশিস ভট্টাচার্য)

Comments


bottom of page