(তৃতীয় পর্বটি পড়ুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে)
চতুর্থ পর্ব
রবিবার সকালে সাধারণত নটার আগে ঘুম ভাঙে না। আজ উত্তেজনায় ঘুম ভেঙে গেল ভোর ছটায়। ঋজু বলেছে দুপুরে যাবে মাইতিবাড়িতে। কাউকে কিছু না বলে। ঋজুর মতে,মানসিক প্রস্তুতি না থাকলে মানুষের মস্তিষ্ক অনেক সময়ই সোজা পথে চলে। বাঁকা পথের জন্য প্রস্তুতি লাগে। আর আমরা হামলা করবো অতর্কিতে।
গরম ভালোই বেড়েছে। সেই তপ্ত দুপুরে আমরা এসে দাঁড়ালাম মাইতি বাড়ির সামনে। ঘড়িতে তখন দুটো পঁচিশ। মেইন দরজায় বেল না বাজিয়ে আমরা গেলাম একতলার বাঁদিকে বনানীর ঘরের দরজায়। তারপর কড়া নাড়লাম। ভেতর থেকে সাড়া এলো। তারপর খাওয়া হাতে দেখলাম আমাদের দরজা খুলে দিল বনানী পাল। আলুথালু বেশে অনেকটাই অপ্রস্তুত,কুন্ঠিত।
আমি বললাম
- একটু দরকার ছিল। খাওয়ার মাঝখানে এসে পড়ার জন্য সরি।
- না ঠিক আছে। আমি হাত ধুয়ে নিচ্ছি। বসুন।
ঋজু ইদানিং খাওয়ার পর মুখশুদ্ধি হিসেবে একটা করে লবঙ্গ খাচ্ছে। মুখে লবঙ্গটা নাড়তে নাড়তে বলল
- খুব একান্তে দুটো কথা আর দুটো প্রশ্ন ছিল তাই আসতে হল।
বনানী তড়িঘড়ি হাত ধুয়ে নাইটির ওপরে একটা ওড়না চাপিয়ে আসল। তারপর ভেজা হাতদুটো ওড়নায় মুছতে মুছতে বলল
- হ্যাঁ, বলুন কী জানতে চান।
- দুটো প্রশ্ন?
-এক, আপনি যে পায়েস খাননি তার প্রমাণ আপনি দিয়ে দিয়েছেন। সেদিন পায়েসে চিনি দেওয়া ছিল না। ধরা পড়েছে রিপোর্টে। আপনাকে কেউ রিপোর্টের কথা বলেনি? দুই, আপনি যে রাত দশটার পরে বাড়িতে উঠেছিলেন সেটা ভিডিও কলে ধরা পড়েছে। আপনি জানেন?
বনানী পালের দৃষ্টিতে হঠাৎ একটা দিশেহারা ভাব এসে মিলিয়ে গেল। খুব নীচু স্বরে বলল
- গরীবের মেয়েরা খুব সহজ টার্গেট। আর আমার তো কোন কূলে কেউ নেই।
উত্তর শুনে ঋজু দুটো হাত পকেটে ঢুকিয়ে বনানী পালের দিকে তাকিয়ে বললেন
- দুটো কথা আগের দিন আপনার মুখ ফস্কে বেরিয়ে এসেছে। এক, বড়বৌদি বলেছিলেন যে পরে কেক দিয়ে যাবেন। সেটা দিয়েছিলেন কিনা জানা হল না। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে আপনি বাড়িতে গত দুটো মাসে আসেননি। গত মাসে তো বোবোর জন্মদিন ছিল। আপনি সেদিন যাননি?
বনানী পাল নির্বিকার। যেন পড়া না পারা ছাত্রী শিক্ষকের সামনে।
ঋজু যে দরজা সিড়ির দিকে খোলে সেদিকে এগিয়ে বলল
- বাড়ির অন্দরমহলের খবর যে আপনি জানেন তার প্রমাণ তো পুলিশের কাছে চলেই যাবে যখন আপনার পুরনো সমস্ত কল রেকর্ড পাবে। আর আপনার কবজির মাপ খুবই কম। পুলিশকে বলে দেবেন কারণ আপনার জন্য মনেহয় আলাদা করে হ্যাঁন্ডকাফ বানাতে হবে।
ঋজুর কথাগুলো শুনে আমার মনে হল যে ও মনেহয় একটা মানসিক চাপ রেখে টোপ দিয়ে রাখলো যাতে ভবিষ্যতে জালে তুলে ফেলতে পারে।
ঋজু কথা বলতে বলতে দরজার খিল খুলে দরজাটা নিজের দিকে টানলো। ওপাশে তালা থাকায় যথারীতি খুললো না। দুটো পাল্লার ফাঁক দিয়ে ঋজু সিঁড়ির নীচ থেকে ওপরে একবার উঁকি মেরে টেনে বন্ধ করে দিয়ে বলল
- ঠিক আছে। আজ চলি। অসময়ে বিরক্ত করলাম। আপনি খেয়ে নিন। আবার আসতে পারি।
- যখন খুশি।
বলে বনানী পাল আমাদের পিছু পিছু দরজা অবধি গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
ঋজু বেরিয়ে একবার পেছন ফিরে দেখে বলল
- যা ভাবছিলাম ঠিক তাই। মহিলার নার্ভ খুব স্ট্রং। আর মোটেই সে গোবেচারা নয়।
আমি জিজ্ঞেস করলাম
- পরবর্তী পদক্ষেপ?
ঋজু একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল
- কালকে ক্লোজ করে দেবো। একটা এসপার-ওসপার হওয়ার দরকার আছে। চল প্রস্তুতি নেওয়া যাক।
ক্রমশ...
পরবর্তী পর্বটি পড়ুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে
পূর্ববর্তী পর্বটি পড়ুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে
(বুকমেকার্স ও বন্ধুরা - শারদীয়া ১৪২৭ -এ প্রথম প্রকাশিত। অলঙ্করণঃ আশিস ভট্টাচার্য)
Yorumlar