(দ্বিতীয় পর্বটি পড়ুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে)
তৃতীয় পর্ব
পরের দিন শনিবার। মাকে নিয়ে কালিঘাট মন্দিরে যেতে হল ভোরবেলায়। ফিরে এসে এগারোটা নাগাদ ঋজুর বাড়ি পৌছলাম। ঋজুর অফিসে একপাশে একটা হোয়াইট বোর্ড থাকে। চলতি বা আগামী প্রজেক্টের বিভিন্ন দরকারি কথা বা তথ্য লেখা থাকে সেখানে। দেখলাম সেই হোয়াইট বোর্ডের ওপরে নীল কালির বোর্ডপেনে লেখা আছে একটা ফ্যামিলি ট্রি। একদম ওপরে লেখা দুটো নাম। অলোক মাইতি ও বন্দনা মাইতি। যার নীচে নেমে চারটে শাখা বিভাজিত। বাঁদিক থেকে প্রথম শাখা বড়ছেলে অরুণ ও মোহনা মাইতি। তারপর অতীন ও শর্বরী মাইতি। তারপর অনামিকা ও পলাশ পালুই। সবথেকে ডানপাশে ছোটছেলে অজয় মাইতি। অরুণ ও মোহনা মাইতির নীচে তাদের ছেলে অমিতেশ। পাশে ব্র্যাকেটে ডাকনাম বোবো। অতীন ও মোহনা মাইতির নীচে তাদের মেয়ে অঙ্কিতা ব্র্যাকেটে ডাকনাম ঝুমি। অনামিকা ও পলাশ পালুইয়ের নীচে তাদের মেয়ে পৃথা; এবং মাইতি পরিবারের এই ফ্যামিলি ট্রি এর নীচে বিচ্ছিন্নভাবে লেখা আছে আরো কয়েকটা নাম।
কল্পনা দাস, বনানী পাল এবং মোহন পান্ডে। যারা সেদিনের ঘটনায় মৃত তাদের নামের ওপরে হাল্কা করে লাল কালিতে ক্রসচিহ্ন আঁকা আছে। ঋজুকে বাইরের জামাপোশাকে দেখে বললাম
- কোথাও যাবি?
ও পেছন ফিরে সম্ভবত কিছু খুঁজছিল। ও আমার দিকে না ফিরেই বলল
- গেছিলাম। আবার যেতে হবে। মাইতিদের সম্বন্ধে খোঁজখবর নিতে হবে না? মন্দিরে কেমন ভীড়?
তার মানে ও অফিসে ঢোকার সময়ে আমার কপালের লাল সিঁদুরের টিপ দেখে নিয়েছে। বললাম
- আছে মোটামুটি। আচ্ছা, বোর্ডে যে কটা নাম লিখেছিস তার মধ্যে মোহন পান্ডেকে তো চিনলাম না?
- বাড়ির ড্রাইভার। সোর্স কল্পনা দাস।
- কল্পনা দাসের সাথেও কথা হয়ে গেছে?
- কাজ ফেলে রেখে লাভ কী বল্? এখন বল্, হোমওয়ার্কের কী খবর? ভেঙে মোর ঘরের চাবির অর্থ খুঁজে পেলি?
আমি অবশ্য সেদিন বাড়ি ফিরেই এ নিয়ে বিস্তর নেট ঘেঁটেছি। লেখালেখি আমার নেশা। সেখানে কেউ আমায় আঁতে ঘা দিলে ছেড়ে কথা বলি না। বললাম
- হুম, দেখলাম। ভেঙে মোর ঘরের চাবি গানটা মোটামুটি সান্ধ্য ভাষায় লেখা। মানে যে ভাষায় বাউলেরা গান বাঁধে। খানিকটা আলো- আঁধারির খেলা থাকে গানের কথায়। এখানে একজন মানুষ তার পরমেশ্বরের অপেক্ষায় বসে আছে। সে আসবে এবং তাকে তার সব বন্ধন ছিন্ন করে নিয়ে যাবে। আর চাবি হল সেই নিয়ন্ত্রক যা তালা লাগিয়ে বেঁধে রাখে। চাবিটাই যদি ভেঙে ফেলি তাহলে আর তালা নেই। বন্ধন ও নেই।
- আচ্ছা বেশ। ভালোই বলেছিস।
- তোর মতটাও বল শুনি।
- দ্যাখ্ ভাই, আমার এসব সম্বন্ধে জ্ঞান কমই আছে তুই জানিস। আমি শুধু তোকে একটু চাগিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কাল তালা আর চাবি নিয়ে এত কথা শোনার পর এই গানটার কথা মনে এল। আসলে ওই জোব্বা পরা সাদা দাঁড়িওয়ালা লোকটা ভীষণ সাহায্য করে সব কাজে।
- তবুও শুনি,তোর কাছে গানটার অর্থ কী?
- খানিকটা মিল আছে তোর সাথে। কিন্তু, তখনকার দিনে অনেকেই তালা দেওয়ার বদলে চাবি দেওয়ার কথা বলতো। পুরনো লেখায় পাবি সিন্দুকে চাবি দেওয়া,দেরাজে চাবি দেওয়া এইসব কথা। আর সবচেয়ে বড় কথা গানের ছন্দ। সেখানে যাবির সাথে ছন্দে মেলাতে গিয়ে চাবি বসাতে হয়েছে। তবে, গানের মূল ভাবটাতো তুই বলেই দিলি। আর এসব আলোচনার মধ্যেই তুই আরেকটা কথা বলে দিলি, খেয়াল করেছিস?
- কী কথা?
- ওই যো বললি, চাবিটাই যদি ভেঙে ফেলি তাহলে আর তালা নেই।
- কিন্তু, চাবি কীকরে ভাঙবি? অনেক খাটনির কাজ।
- জেলের ঘানি টানার থেকে তো কম খাটনির কাজ। আর ভাঙা মানে তো আর সেই ভাঙা নয়। সেটাকে নষ্ট করা বা গুম করে দিলেই চলে।
- এবারে কিন্তু তোর হেঁয়ালি আমি বুঝতে পারছি না।
- আচ্ছা ছাড়। বেশী চাপ নিস না। এখন বল এই ফ্যামিলি ট্রি দেখে কী বুঝলি?
আমি আবার বোর্ডের দিকে তাকিয়ে বললাম
- নাটকের প্রধান কুশীলবদের নাম লিখেছিস।
ঋজু বোর্ড পেনটা নিয়ে বোর্ডের কাছে গিয়ে বলল
- স্যান্ডি, মানি ট্রেইল বলে একটা কথা শুনেছিস?
- হ্যাঁ,কেন শুনব না। কোনো মার্ডার হওয়ার পর তার অর্থ সম্পত্তি কার দিকে যাবে সেটা দেখা।
- হুম, একদমই তাই। মানে হত্যাকাণ্ডের ফলে সবথেকে লাভবান কে হবে? মাইতি পরিবারের বিস্কুট কোম্পানির ইয়ারলি টার্ন-ওভার সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। এখানে তুই দ্যাখ্,অলোক মাইতির চারভাগের একভাগ করে তো নিশ্চিত অনামিকাদেবী ও শর্বরী মাইতির। এবং ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে যাচ্ছে তাতে দুজনেই বাকি সম্পত্তির ভাগ চেয়ে মামলায় জড়িয়ে পড়বে। আর এখানে ডিসাইডিং ফ্যাকটর অনেকটাই অলোক মাইতির বড় নাতি বোবো। এবং সেজন্যই অনামিকাদেবী আর পলাশবাবু আমাদের কে তদন্তে নিয়োগ করেছে যদি মেজবৌয়ের সাথে খুনের যোগসাজশের কোনো সূত্র পাওয়া যায়। যদি সেটা পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে পারছিস? মাইতি পরিবারের সমস্ত কিছু পালুই দম্পতির। এদের এই লোভও কম নয়। আর মেজবৌয়ের ভূমিকা তো এখানে অনেকটাই আছে। কারণ,বোবোর কাস্টডি মনেহয় ওর দিকেই যাবে এবং কোনো অপরাধ না করে থাকলে মেজবৌই লাভবান হবে।
- আর এই দড়ি টানাটানির আদৌ কি কিছু সুরাহা হবে?
- হবে, যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়।
- অনামিকাদেবী আর পলাশ পালুই তোর বাড়ি বয়ে আসত না যদি ওরা দোষী হত। অনামিকা পালুই মহিলাকে তো খারাপ মনেহয় না। শুধু প্রতিটা কথায় 'বুঝলেন' বলে।
- হুম, এটা ওনার মুদ্রা দোষ। তাহলে দোষী ধরতে হয় তৃতীয় কাউকে। সেটা কিন্তু মনে রাখিস জীবিত বা মৃত ব্যক্তিও হতে পারে। এরকম অনেক জায়গাতেই পুরো পরিবার সমেত আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। আর যেখানে ছোটছেলে অজয় তো খানিকটা সেরকমই ছিল।
- আর বনানী পাল?
- কেউই এখানে গোবেচারা নয়। এখন আর তিনটে কাজ বাকি। একনম্বর কাজ,কেকের দোকানে গিয়ে একবার সময়ের হিসেবটা নিতে হবে। দুনম্বর কাজ, অভীকদাকে দিয়ে বলিয়ে যদি ইন্সপেক্টর বৈদ্যর থেকে সবার কল রেকর্ডটা আর ফরেনসিক ডিটেইলস নিয়ে রাখতে পারি। আর তিন নম্বর কাজটা হচ্ছে মাইতি বাড়িতে আরেকবার যাওয়া। এবং সেটা প্রথম দুটো কাজের পরে হলেই ভালো।
- অভীকদাকে ফরেনসিক ডিটেইলসের কাগজপত্র দেবে?
- লালবাজার ক্রাইম ব্রাঞ্চের উর্ধ্বতন অফিসার হলে তার সোর্স অনেক বেশি হয়। আর অভীকদা কী পারে না পারে তার উদাহরণ তো আগের কেসগুলোতেও পেয়েছিস।
আমি বললাম
- তাহলে আর দেরী করে কী লাভ? চল বেরিয়ে পড়ি।
- হ্যাঁ, তোর অপেক্ষাতেই ছিলাম, চল্।
ঋজু অভীকদাকে একটা মেসেজ ছেড়ে রাখলো যাতে কল রেকর্ডের লিস্টটা পেতে পারে।
ঋজুর বাড়ি থেকে যদুবাবুর বাজার হেঁটে দু-তিন মিনিটের বেশী হবে না। তবুও ঋজু কেন আমাকে গাড়ি নিতে বলল বুঝলাম না। যদুবাবুর বাজারের কাছেই সেই কেকের দোকান যেখানে থেকে কেক আনা হয়েছিল। দোকানের মালিককে প্রথমে কিছু বিবৃতি দিতে হল। এছাড়াও পাড়ার দোকান বলে ঋজুকে ভদ্রলোক চেনেন। ঋজু দোকানের মালিককে বলে দিলো সন্ধ্যে আটটার পরের রেকর্ডিং চালাতে। ঠিক আটটা পঁচিশের ক্লিপিংসে দেখা গেল পলাশ পালুইকে। দোকান থেকে কেক নিয়ে টাকা দিয়ে চলে গেলেন। পলাশবাবুর কথার সাথে সিসিটিভি রেকর্ডিং মিলে গেল। আমরা বেরিয়ে গাড়ির দিকে এগোতে গিয়ে দেখলাম ঋজু থমকালো। ডানদিকের ওষুধের দোকানের একটা ছেলের সাথে দেখলাম হাসি বিনিময় হল। আমিও দাঁড়ালাম। ঋজুকে দেখলাম কয়েক সেকেন্ডের বিরতি নিয়ে দোকানে ঢুকে সেই ছেলেটাকে কিছু বলল। তারপর আমাকে দু-মিনিটের জন্য বাইরে রেখে ও আরো একটু ভেতরে ক্যাশ কাউন্টারের দিকে গেল। ঋজু বলে গেল দু-মিনিটের জন্য। এল দশ মিনিটে। মেজাজটা দেখলাম ফুরফুরে। বলল
- চল ফিরে যাই। মোটামুটি একটা টাইম তো পেলাম। অনামিকা ও পলাশ পালুই, ড্রাইভার মোহন পান্ডে ও ওষুধের দোকানের টাইমিং মিলে যাচ্ছে। আর বনানী পালের ওষুধের টাকা সরানোর ব্যাপারটাও সত্যি কিনা যাচাই করলাম।
- তুই কী পলাশ পালুইয়ের কথাটাও চেক করলি?
- বাঃ, করতে হবে না?!! মনে রাখিস, আমাদের ক্লায়েন্ট কিন্তু অনামিকা পালুই। তার স্বামী শুধু তার সঙ্গী। এমনিতেই আছে প্রবাদবাক্য, যম- জামাই-ভাগ্নে, তিন নয় আপনে।
- কী পেলি?
- ভদ্রলোক মিথ্যে বলেননি। দোলের দিন এসেছিলেন এবং শ্বশুরের ওষুধও নিয়েছিলেন। যাক্ সে কথা, ঘটনার দিন পলাশবাবু গাড়িতে করে এসেছিলেন। দশ মিনিটের মধ্যে কেক নিয়ে তিনি মাইতিবাড়িতে ফেরেন। ড্রাইভার ছিল মোহন পান্ডে। গাড়ি রাখতে হয়েছে পেছনের রাস্তায় কারণ এই রাস্তায় নো-এন্ট্রি। যেমন আজ আমরা রেখেছি। এবার আমরা সোজা যাব মাইতি বাড়িতে।
- এত তাড়াতাড়ি! সমাধান হয়ে গেছে?
- ধুর! গাড়িতে কতটা সময় লাগে দেখব। সমাধান সামনে কিনা জানি না তবে কাহিনীতে নতুন মোড় আসতে চলেছে বুঝতে পারছি।
- সে কী রে!! ঠিক আছে। চল দেখি।
গাড়ি মাইতি বাড়ির দরজায় পৌছালো ঠিক সাড়ে চার মিনিটে। ঋজু বলল
- সন্ধ্যেবেলা ধরে নিলাম যাতায়াত দশ মিনিট। কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিটের মাথায় পলাশবাবু কেক নিয়ে ফিরেছে। তার মানে পলাশবাবু বেরিয়েছে আটটা পনেরো এবং ফিরেছে পয়ত্রিশ। আটটা পনেরোয় ছোটছেলে অজয় বসে খোশমেজাজে খেলা দেখছিল। দোতলায় নামার সম্ভাবনা হাফ-টাইমে। কিছু ফরেনসিক ডিটেইলসের খবর মিডিয়ার কাছেও আছে। খবরের কাগজে এসেছিল ফরেনসিক রিপোর্টে ইউরিনারি ব্লাডারে ইউরিন কম ছিল। ওর বাথরুম ছিল দোতলায় এবং সাথে ও যে ধরনের ড্রাই নেশা করতো সেটা ওর দোতলার বাথরুমেই সম্ভব।
- ওর সেসব নেশা ছিল?
- একদম ছিল। পাকা খবর। খেলার হাফ টাইম হয়েছিল আটটা পয়ত্রিশে যখন পলাশ পালুই ঢুকেছিল। অথচ পলাশ পালুইকে দরজা খুলে দেয় বনানী। তার মানে ও নেমেছিল কিন্তু পলাশবাবুর বেল বাজানো সত্ত্বেও দরজা খোলেনি। আর বনানীর দরজা খোলা ছিল রাত আটটা পনেরোর থেকে রাত দশটা অবধি। পোস্টমর্টেমে অজয় মাইতির সম্ভাব্য মৃত্যুর সময় রাত নটা। অজয় মাইতির মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা ছিল না। তাহলে সেই আধঘণ্টার মধ্যে কী এমন হল যা কিনা তাকে আত্মহত্যার দিকে নিয়ে গেল?
আমরা কথা বলতে বলতে আবার চলে এলাম ঋজুর বাড়িতে। অফিসে এসে ঋজু ওর বোর্ডে প্রতিটা মৃত মানুষের পাশে ছোট করে পোস্ট-মর্টেমে পাওয়া সম্ভাব্য মৃত্যুর সময় লিখে বলল
- ২২শে মার্চ পৌনে আটটায় শুরু হয় ইউরো কাপের কোয়ালিফায়িং ম্যাচ। আলবেনিয়া বনাম তুর্কির সেই ম্যাচের রেসাল্ট হয় আলবেনিয়া শূন্য, তুর্কি দুই। হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ হচ্ছিল যতখানি হাইলাইটস দেখে বুঝলাম। এদিকে মাইতি বাড়িতেও সবাই খুশী। যেহেতু এখানে ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই তাই অনুমানক্ষমতাই ভরসা। দুটো জিনিস বড় বেশি ভাবাচ্ছে, প্রথম পায়েসের সেটে আটটা কাপ হলে সাতটা কাপের হিসেব মিলছে। আর একটা কাপ কোথায়?
আমি বললাম
- পুলিশের সিজার লিস্টে নেই কী করে জানলি?
- থাকলে তো মিটেই গেল। যদি পায়েস ছাড়া থাকে তাহলে তো আরো চিন্তা নেই। দ্বিতীয় জিনিসটা হচ্ছে শর্বরী মাইতির চাবি উধাও। সেটা কেউ কেন করবে? স্যান্ডি, আমি একটা ধাঁধা তোকে জিজ্ঞেস করছি, চেষ্টা কর দেখি।
আমি এবারে ক্ষেপে গিয়ে বললাম
- কী হচ্ছে বলতো? পরের পর আমার ব্রেনের তুই পরীক্ষা নিয়ে যাচ্ছিস। এত পরীক্ষা দিলে তো আমিই কেসটাকে সলভ করে দেব।
- দিবিই তো। কেসটা খুব ছোট কেস। কিন্তু এমন একটা গিঁট লেগেছে যে ছাড়ানো যাচ্ছে না। নাহলে কিন্তু কেসটাতে কিছু নেই।
- আচ্ছা বল।
- বলব না। দেখাবো। এ দ্যাখ্ পলাশ পালুইয়ের ওষুধের দোকানের বিল।
- আমি ঋজুর মোবাইলে নেওয়া বিলের ছবি দেখতে লাগলাম। তারপর বললাম
- দোকানের রেকর্ড থেকে নিলি মনে হচ্ছে? হ্যাঁ কিন্তু,কী হয়েছে। এসব তো প্রেসার,সুগার, থাইরয়েডের ওষুধ। সাথে ঘুমের ওষুধ আর অ্যান্টাসিড।
ঋজু বিরক্ত হয়ে বলল
- আঃ, আরো নীচে নাম। শুধু ওষুধ আছে নাকি?
- ওহ্! বোরোলীন, স্যানিটারি ন্যাপকিন আর এটা বুঝতে পারছি না। জি . নিউজ টা কী?
- জি. নিউজ মানে গুড নিউজ। প্রেগনেন্সি টেস্টের কিট।
- হ্যাঁ তো?
- হ্যাঁ তো কী রে!! স্যানিটারি ন্যাপকিন আর পেগনেন্সি টেস্ট কিট একসাথে এক মহিলার লাগে?
- ও হরি!! এই কেস। তাহলে ন্যাপকিন একজনের হলে গুড নিউজ অপরজনের হবে।
ঋজু ওর বোর্ডের সামনে গিয়ে বলল
- গুড নিউজ নাম হলেই কি গুড নিউজ হয় রে? পলাশবাবুর জন্য যে সেটা ব্যাড নিউজ নয় সেটাই বা কে বলতে পারে? কাল মেজবৌ শর্বরী মাইতির কথায় যে পলাশবাবুর চারিত্রিক দিকের ইঙ্গিত ছিল খেয়াল করেছিস নিশ্চয়ই?
- আচ্ছা, তুই কাল ইচ্ছে করে মহিলাকে উত্তেজিত করতে চাইছিলি না রে?
ঋজু একটা হাসি দিয়ে বলল
- আরে, গরম মাথার মানুষদের সবসময় কাজে লাগাতে হয়। মাথা গরমে বেরিয়ে আসা একটা টুকরো কথাও অনেক কাজে লাগে। যাক্ ছেড়ে দে, এখন দেখি অভীকদা কিছু বের করতে পারল কিনা।
ঋজু হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে দেখালো অভীকদার ম্যাসেজ
"দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর কোনো তথ্য আনঅফিসিয়ালি ডিসক্লোজ করতে রাজি নয়"
অভীকদার টেক্সট দেখে আমাদের দুজনেরই অল্প আশাভঙ্গ হল। ঋজু চুপ করে ডানহাতের তর্জনী আর মধ্যমা দিয়ে খানিকটা চিবুক ঘষে বলল
- স্যান্ডি, এতদিন পর্যন্ত আমরা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে একটারও সমাধানের চেষ্টা করিনি। কিন্তু, এটাতে মনেহয় সেই কাজ করতেই হবে। ঢাল,তরোয়াল না থাকলেও নিধিরাম সর্দার হতে তো ক্ষতি নেই। কল লিস্ট না পেলেও একটা কলের সময় তো জেনেছি। মেজবৌয়ের মোবাইলে বোবোর সাথে বড়বৌদির কথা হয় মেজদার ঘরে। সেটা তো জানা।পায়েস রাখা হয়েছিল আটটা নাগাদ। কিন্তু ভিডিও কল হয়েছে দশটার পরে। সে সময়ে তো বড়বৌদি দোতলায় এমনি যায়নি।
- তাহলে?
- তাহলে আর কী! ভিডিও কল হয়েছে পায়েসটা নেওয়ার সময়। এবং এই একটাই ঢিল মারতে হবে আন্দাজে, খুব সন্তর্পণে।
- বুঝতে পারলাম না।
- নাই বা বুঝলি একদিন আগে।
- মানে?কালকে বোঝাবি?
- হ্যাঁ, একদম। তাও থিয়োরি নয়, প্রাকটিক্যাল করে বোঝাবো।
ঘড়িতে চোখ রাখতেই দেখলাম, প্রায় তিনটে বাজে। মা না খেয়ে আছে। তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়লাম ঋজুর বাড়ি থেকে। আগামীকাল আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কাল মাইতি বাড়ির রহস্যভেদ অভিযান। পেটের ভেতর উত্তেজনায় গুড়গুড় করছে। ঢিল ঠিক জায়গায় লাগবে তো? জানা নেই। তবে জানার জন্য অদম্য আগ্রহে অপেক্ষা করব।
ক্রমশ...
পরবর্তী পর্বটি পড়ুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে
পূর্ববর্তী পর্বটি পড়ুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে
(বুকমেকার্স ও বন্ধুরা - শারদীয়া ১৪২৭ -এ প্রথম প্রকাশিত। অলঙ্করণঃ আশিস ভট্টাচার্য)
Comentários