top of page
Writer's pictureশোভন কাপুড়িয়া

এলিয়েন - শোভন কাপুড়িয়া



“ভয়ঙ্কর কিছুর আগমন ঘটতে চলেছে পৃথিবীতে। সেটার আভাস দিতে চেয়েছিলাম ওদের। কিন্তু ওরা বোঝেনি বা বোঝার চেষ্টাও করেনি। আমার সমস্ত কথা ওরা হেসে উড়িয়ে দেয়। তাই তোমায় বলে যাচ্ছি সেই কথা, আমি জানি যে তুমি বুঝতে পারবে”, কথাগুলো তাড়াহুড়োর মধ্যে বলল ভেঙ্কটেশ। বেশ কয়েক বছর আগে সংস্থা-বিরোধী মত পোষণ করার কারণে বহিষ্কার করা হয় তাকে। তবে আমার সঙ্গে অদ্ভুত এক বন্ধুত্বের সম্পর্ক তার। একমাত্র আমিই আছি যে ওর বলা কথাগুলো ফেলতে পারি না কিছুতেই — সে যতই পাগলাটে মনে হোক না কেন! আমি বেশ বুঝতে পারছি যে ভেঙ্কটেশ কোন কথাগুলো বলার চেষ্টা করছে। আজ ওর বাড়িতে বসে এই পাগলের প্রলাপ পুরোটা শুনতে হবে আমায়। বাড়িটার পরিবেশ বড় অদ্ভুত লাগছে, কোথা থেকে যেন পচা একটা গন্ধ বেরোচ্ছে।


আমাদের সংস্থা আদতে একটি বেসরকারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সংস্থা হলেও এই সংস্থার ইতিহাস রহস্যময়। এই সংস্থার মালিক ড: ডিসুজা একসময় সিআইএর সঙ্গে কাজ করতেন। কুখ্যাত এক্সপেরিমেন্ট এমকেআল্ট্রাতেও তাঁর যুক্ত থাকার খবর পাওয়া যায়। আমেরিকার হকিন্স শহরের একটি ল্যাবে প্রায় চল্লিশ বছর আগে অদ্ভুত কিছু পরীক্ষার দরুন অজান্তেই একটি পোর্টাল সৃষ্টি করেন ড: ব্রেনার নামে এক বিজ্ঞানী ও তাঁর দল। বলা হয়, ‘ইলেভেন’ নামের একটি মেয়ের মানসিক শক্তিকে প্রথমে বৃদ্ধি করা হয় এমকেআল্ট্রা পরীক্ষার মাধ্যমে। সেই মেয়েটি তার মানসিক শক্তি ব্যবহার করেই পোর্টালটি খুলে ফেলতে সক্ষম হয়। যার ফলে ‘আপসাইড ডাউন’ নামক এক সমান্তরাল এক জগত থেকে আগমন‌ হয় এক দানবের, অনেকের মৃত্যু হয় সেই দানবের হাতে। পরীক্ষার অন্যতম বেনিফ্যাক্টর ছিলেন এই ডিসুজা। তবে কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। তাঁর তত্ত্বাবধানেই ভারতের পুনে শহরের এই সংস্থার ল্যাবেও একই পদ্ধতিতে একটি পোর্টাল খোলা হয়েছে, সমান্তরাল জগতের সন্ধানে। এবারে অবশ্য ভুলবশত নয়, জেনে বুঝেই মানসিক শক্তি কে ব্যবহারযোগ্য ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তিতে পরিণত করে খোলা হয়েছে এই পোর্টাল।


না, হকিন্স শহরের মত কোনো অদ্ভুত দানবের আগমন এখানে ঘটেনি। সত্যি বলতে কিছুই আসেনি। তবে কিছুদিন আগে কোনো অজানা অরিজিন থেকে আমাদের কাছে একটি এনকোডেড মেসেজ এসে পৌঁছায়। মেসেজটি কারা পাঠিয়েছে সেই সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। মেসেজটিকে ডিকোড করে একটি ইংরেজি শব্দ ও কয়েকটি সংখ্যা ছাড়া কিছু পাওয়াও যায়নি।


মেসেজটি এরকম -

SECRET ; 4 ; 0 ; ;; 18 ; 13 ; 2 ; ;; 11 ; 0 ; 15 ; 13


মেসেজটি কোনো একটি জাঙ্ক মেসেজ ভেবে কেউই গুরুত্ত্ব দেয়নি। সত্যি বলতে আমিও না। তবে ভেঙ্কটেশ হয়ত বুঝেছিল যে এই মেসেজের পেছনে বলা রয়েছে এমন কিছু কথা, যেগুলো সাধারণ চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই। ভেঙ্কটেশের মনে এই বিশ্বাস জন্মেছে যে পুনেতেও কিছু একটার আগমন ঘটতে চলেছে, অনেকটা হকিন্স শহরের মতই।


“তুমি কী বলছ ভেঙ্কটেশ!”

“এই সংখ্যা গুলো শুধু সংখ্যা নয়। এটা আসলে এনক্রিপটেড মেসেজ”।

“তোমার কী মনে হয়? হকিন্স শহরের মত যদি ঐ দানব বা এলিয়েনের আগমন হয় তাহলে ওরা আমাদের মেসেজ পাঠাবে? হাস্যকর!”

ভেঙ্কটেশ কিছুক্ষণ চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপরে গলা‌ নীচু করে চোখ দুটো বড়ো করে বলল, “কে বলল যে সমান্তরাল দুনিয়া থেকে শুধু এলিয়েনরাই আসতে পারে?”

“তবে?” বললাম আমি।

ভেঙ্কটেশ বলল “মেসেজের মানে আমি বের করে ফেলেছি”।

আমি কিছু বললাম না, অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম শুধু।


ভেঙ্কটেশ বলতে শুরু করল “যেকোনো এনক্রিপটেড মেসেজ কে ডিকোড করতে গেলে দরকার পড়ে একটি ডিক্রিপশন কি, অর্থাৎ যেটা ব্যবহার করে গোপন মেসেজের আসল উদ্দেশ্য তুমি পড়তে পারবে। আমি সেভাবেই এগোই। ধরো SECRET হল সেই ডিক্রিপশন কি বা পাসওয়ার্ড। এবার প্রথম সংখ্যাটা ধরো 4। S এর 4 ঘর পরে যে ইংরেজি অক্ষর আসে সেটা হল W। তারপরে 0, অর্থাৎ দ্বিতীয় E এর থেকে কোনোরকম স্থান পরিবর্তন হবে না। সুতরাং, দ্বিতীয় ইংরেজি অক্ষর হল E। অর্থাৎ 4; 0 কথার অর্থ হল WE। এর পরে একটা স্পেস দিয়ে ;; রয়েছে অর্থাৎ হতেই পারে যে নতুন‌ শব্দের সূচনা হবে SECRET এর প্রথম অক্ষর থেকে। এবার S এর 18 ঘর পেছনে চলে যাও, পাবে A। E এর ১৩ ঘর পরে চলে যাও , পাবে R। C এর দুই ঘর পরে চলে যাও , পাবে E। সুতরাং 18; 13; 2 এর অর্থ হল ARE। এমন ভাবেই পুরো কথাটার মানে WE ARE HERE”।


আমি একটু হেসে বললাম, “অর্থাৎ সমান্তরাল দুনিয়া থেকে এলিয়েনরা ইংরেজিতে মেসেজ পাঠিয়েছে? হাসালে! এতদিন ধরে ঘরবন্দী হয়ে তোমার মাথা আরো খারাপ হয়ে গিয়েছে”।

ভেঙ্কটেশ একটু অদ্ভুত হাসল, “বিশ্বাস হচ্ছে না তাই না? এসো আমার সঙ্গে”।


আমায় প্রায় টেনে নিয়ে পাশের একটা ঘরে নিয়ে এল ভেঙ্কটেশ। এই ঘর থেকেই তো সেই পচা গন্ধ বেরোচ্ছে। তীব্র সেই গন্ধ। ভেঙ্কটেশ হাসল, তারপরে একটি নির্দিষ্ট দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল “ঐ দেখো!” ওর নির্দেশ অনুসরণ করে তাকাতেই আমি কেঁপে উঠলাম। সামনে ভেঙ্কটেশের মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। ভেঙ্কটেশ যদি মৃত হয়ে থাকে, তবে এ কে? ভেঙ্কটেশ এবার ক্রুর হাসল, বলল “আমিও ভেঙ্কটেশ, তবে সমান্তরাল জগতের”। বলেই পকেটে ধরা একটি যন্ত্রের সুইচ টিপে দিল। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে একটা তীব্র যান্ত্রিক শব্দের উৎপত্তি হল। জানলা দিয়ে দেখলাম সমগ্র আকাশ অন্ধকার করে উপস্থিত হয়েছে এক বিশালায়তন স্পেস শিপ।

“এসব কী?” আমি তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞেস করলাম।


ভেঙ্কটেশ বলল, “সমান্তরাল দুনিয়াতে যে মানুষ থাকতে পারে সেটা ভাবোনি তোমরা। তোমাদের ধারণা যে শুধু দৈত্য দানব বা এলিয়েনদেরই অস্তিত্ব রয়েছে। এই স্পেসশিপ কিন্তু কোনো এলিয়েনের নয়, এটি মানুষের স্পেসশিপ। আমাদের দুনিয়ার মানুষ। তোমাদের পরীক্ষার ফলে যে পোর্টাল খুলে যায় তার ফলে স্পেস টাইম কন্টিনিউয়ামে তৈরি হয়েছে গহ্বর। সেই কারণেই আমাদের আগমন তোমাদের পৃথিবীতে। আমাদের দুনিয়ার মানুষ এবার তোমাদের দুনিয়াকে দখল করতে উদ্যত হবে। তোমাদের ঐ মেসেজ আমরাই পাঠিয়েছিলাম যাতে তোমরা বুঝতে পারো যে আমাদের দুনিয়ার অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু তোমরা সেটাকে পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিলে, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের অন্তিম পরিণতি কিন্তু ধ্বংসাত্মক। এবার থেকে এই পৃথিবী আমাদের, WE ARE HERE”।


শত শত স্পেসশিপ এখন আকাশ ঢেকে দিচ্ছে, শুরু হচ্ছে নতুন এক অন্ধকার অধ্যায়ের।

Comments


bottom of page